May 8, 2024

আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৩০০ কোটি টাকার দুর্নীতি: তথ্য চেয়ে দুদকের চিঠি

0

রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির নীতিনির্ধারকরা ৩০০ কোটি টাকারও বেশি অবৈধভাবে পকেটে ঢুকিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে সরকারি এক নিরীক্ষা প্রতিবেদন হাতে পেয়ে দুদক নড়েচড়ে বসেছে। এরইমধ্যে ২০১১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের তালিকা চেয়েছে দুদক। চাওয়া হয়েছে বিগত ১৩ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাবও।

দুদক সূত্র জানায়, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সার্বিক বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর থেকে দুদকে একটি তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়। ওই প্রতিবেদনে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক নিয়োগের নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র ফুটে উঠে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে গভর্নিং বডি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন না দিয়ে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে ২৩৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়। নিয়োগপ্রাপ্ত বেশিরভাগ শিক্ষকেরই নিবন্ধন সনদ নেই। এছাড়া ২০১১ সালে ১১১ জনকে সম্পূর্ণ অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অস্থায়ী নিয়োগপ্রাপ্ত ৯৯ জনকে জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী বেতন দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে ২০১১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবৈধভাবে ৩৯০ শিক্ষক-কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া এসব অনিয়ম করে গভর্নিং বডির সদস্য ও তাদের সহযোগীরা নানা ব্যয় দেখানো ও অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মতিঝিল এজিবি কলোনির বাসিন্দাদের উদ্যোগে ১৯৬৫ সালের ১৫ মার্চ ‘আইডিয়াল স্কুল’ নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৬৮ সালে জুনিয়র স্কুল এবং স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনামলে ১৯৭২ সালে এটি পূর্ণাঙ্গ হাই স্কুলে উন্নীত হয়। ১৯৯০-৯১ শিক্ষা বছরে সরকারের নির্দেশে মতিঝিল ক্যাম্পাসে স্কুল ভবনের পূর্ব পাশে ছাত্রীদের জন্য কলেজ শাখা চালু করা হয়। ২০০৩ সালে মতিঝিল ক্যাম্পাসে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির মাধ্যমে ইংলিশ ভার্সন চালু করা হয়। ২০০৫ সালে ইংরেজি ভার্সনে প্রথম শ্রেণিতে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি এবং পর্যায়ক্রমে দশম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করা হয়। ২০০৬ সালের অক্টোবর মাসে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে স্কুল বিল্ডিং সংলগ্ন ১২ শতাংশ জমি কেনা করা হয়। ২০০৯ সালে নতুন গভর্নিং বডি দায়িত্ব গ্রহণ করার পর ওই জমির ওপর প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থায়নে ইংলিশ ভার্সনের জন্য প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২ তলা নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে এই ভবনটিতে ইংলিশ ভার্সন স্থানান্তর করে পাঠদানের কার্যক্রম চলছে। ১৯৯৬ সালে বনশ্রী আবাসিক প্রকল্প এলাকায় প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৭০২ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির বনশ্রী শাখা যাত্রা শুরু করে। ২০১১ সালের ২ মার্চ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এক হাজার ৭৫৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে তিনটি ক্যাম্পাসে ২৮ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন সাতশ’র বেশি।

বিভিন্ন সময়ে প্রতিষ্ঠানটিতে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয় আলোচনায় উঠে আসে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গভর্নিং বডির একটি বৈঠক হলেই সম্মানী হিসেবে সভাপতি নেন ২৫ হাজার টাকা। প্রত্যেক সদস্য ছয় হাজার টাকা এবং অফিস সহকারীরা নেন তিন হাজার টাকা করে। সম্মানি ভাতা হাতিয়ে নিতেই কোনও কারণ ছাড়া প্রতি মাসে চারটি করে মিটিং করা হয়। এছাড়া প্রতিবেদনে রয়েছে নানা অনিয়মের তথ্য।

জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার (তদন্ত) জহুরুল হক মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইডিয়াল স্কুল নিয়ে অভিযোগ অনেক দিনের। এ অভিযোগের বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান করছে। তাদের শিক্ষকদের আয়-ব্যয়ের হিসাব চাওয়া হয়েছে। কত জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে, কীভাবে করা হয়েছে। অর্থ অপচয় হয়েছে কিনা, সেটা দেখার জন্য তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া নিরীক্ষা অধিদফতর যে প্রতিবেদন দিয়েছে, সেটাও আমরা মূল্যায়ন করবো। নিয়োগ নিয়ে যদি কোনও অনিয়ম পাওয়া যায়, যদি দুর্নীতি প্রমাণ হয়—অবশ্যই শিক্ষকসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দুদকের চিঠি এবং অভিযোগের বিষয়ে জানতে আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার মেসেঞ্জারে এসএমএস পাঠানো হলেও তিনি সাড়া দেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © All rights reserved 2023. | CoverNews